বর্তমানে অনলাইনে একটি জনপ্রিয় পেমেন্ট প্রসেসর হল নেটেলার। অন্যান্য দেশে
আগে থেকেই নেটেলার জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে নেটেলারের জনপ্রিয়তা শুরু
হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ থেকে। কারণ এর পূর্বে নেটেলার বাংলাদেশিদের
নেট+ কার্ড প্রদান করত না। ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ তে বাংলাদেশসহ আরও ১৮টি
দেশ নেট+ মাস্টারকার্ড পাওয়ার সুবিধাভুক্ত হয়। উল্লেখ্য যে আমাদের
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের ব্যবহারকারীদের নেট+ মাস্টারকার্ড
প্রদান করা হয় না।
রেগুলেশনঃ
নেটেলার মুলত একটি UK based পেমেন্ট প্রসেসর। নেটেলার একটি
FSA রেগুলেটেড(
লিঙ্ক)
পেমেন্ট প্রসেসর। নেটেলার পেমেন্ট প্রসেসরটি Optimal Payments Limited
দ্বারা পরিচালিত। Optimal Payments Limited প্রতিষ্ঠানটি Financial Conduct
Authority দ্বারা অনুমোদিত এবং নেটেলার অনলাইনে ই-কারেন্সি ভিত্তিক
কার্যক্রমের জন্য অনুমোদিত।
সুবিধাঃ
- প্রিপেইড মাস্টারকার্ড প্রদান করে
- ভার্চুয়াল মাস্টারকার্ড প্রদান করে
- ব্যাংকে উইথড্র করা যায়
- চেক উইথড্রয়াল
- কোন ফি ছাড়াই অন্য কারো নেটেলার অ্যাকাউন্টে মানি ট্রান্সফার করতে পারবেন
- সমর্থিত অ্যাকাউন্ট কারেন্সিঃ USD, EUR, GBP, JPY, INR, HUF AUD, BGN, CAD, DKK, EEK, LTL, LVL, MXN, NOK, PLN, RON, RUB, SEK, SGD
- রিওয়ার্ড পয়েন্ট সুবিধা
- VIP অ্যাকাউন্ট
ভেরিফিকেশনঃ
নেটেলারে
আপনাকে অবশ্যই অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করতে হবে তাদের সার্ভিস ব্যবহার করার
জন্য। ভেরিফাই না করে $১০০ পর্যন্ত লেনদেন করা যায় কিন্তু তা নিরাপদ নয়।
আপনাকে অবশ্যই ভেরিফাই করতে হবে। ভেরিফাই ছাড়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা
সম্ভব নয়। নেটেলার অ্যাকাউন্টের নাম এবং আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের নাম
এক হতে হবে। তা নাহলে ব্রোকারে সমস্যা হতে পারে। তাই নিজের আসল নাম ব্যবহার
করতে হবে।
ভেরিফাই করতে যা লাগবেঃ ন্যাশনাল আইডি কার্ড/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরিষ্কার স্ক্যান কপি
ভেরিফাই করতে সময় লাগেঃ ১-২ দিন
ভেরিফাই নিয়ে সমস্যাঃ
অনেকেই ভেরিফাইয়ের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হচ্ছেনা
বলে অভিযোগ করেছেন। অনেকে ডকুমেন্টস আপলোড করছে ঠিকই কিন্তু সাবমিট করছেন
না। ডকুমেন্টস আপলোড করার পরের পেইজে সাবমিটের আলাদা বাটন রয়েছে। সেখান
থেকে সাবমিট না করলে ভেরিফাইয়ের জন্য রিকোয়েস্ট ওদের কাছে যায় না, তাই
ভেরিফাইও হয় না। তাই ভেরিফাই করার সময় সবাই এই ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন।
নেট+ মাস্টারকার্ডঃ
নেটেলারের
সবচেয়ে বড় সুবিধা এর প্রিপেইড মাস্টারকার্ড। বাংলাদেশের অধিকাংশ
ই-কারেন্সি ব্যবহারকারীরা একে অন্যের কাছে ই-কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করে থাকে।
নেটেলার মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে উপকারী যেই সুবিধাটি আপনি পাবেন তা
হল আপনি যেকোন সময় আপনার নিকটবর্তী মাস্টারকার্ড সমর্থিত ATM বুথ থেকে
উইথড্র করে নিতে পারবেন কার্ডের সাহায্যে। অধিকাংশ ব্যাংকের বুথই
মাস্টারকার্ড সমর্থন করে। বুথের বাইরে মাস্টারকার্ডের লোগো দেখলেই বোঝা
যাবে এখানে মাস্টারকার্ড কাজ করবে। আপনি কার্ড ঢুকিয়ে সাধারন নিয়মে পিন
নাম্বার দিয়ে টাকা তুলতে পারবেন। আপনার অ্যাকাউন্টে যত ডলার থাকবে, তা
বাংলাদেশের বর্তমান এক্সচেঞ্জ রেট অনুযায়ী টাকায় দেখাবে। আপনি আপনার
প্রয়োজনীয় পরিমান টাকা তুলে নিতে পারবেন বুথ থেকে। সম্ভবত ডাচ বাংলা
ব্যাংকের বুথে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টারকার্ডগুলো একটু ঝামেলা করে। ব্র্যাক
ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ইত্যাদি ব্যাংকের বুথ থেকে সহজভাবেই টাকা
তোলা যায়। ATM উইথড্রের ফি তুলনামুলক একটু বেশী মনে হতে পারে। $৬ ডলার ফি
এবং সাথে অতিরিক্ত ২.৯৫% FX Fee ফি প্রযোজ্য হবে। তারমানে $১০০ ডলার উইথড্র
করলে আপনার $৯ ফি পড়ছে। $২০০ উইথড্র করলে আপনার সর্বমোট ফি পড়বে $১২.
এই
মাস্টারকার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আপনি বিশ্বের যেই দেশেই যান না কেন,
এই মাস্টারকার্ড সেখানে কাজ করবে। আপনার অ্যাকাউন্ট যদি USD কারেন্সি
দিয়ে খোলা হয়, তবে USA থেকে ATM উইথড্র করলে আপনার অতিরিক্ত ২.৯৫% FX Fee
প্রযোজ্য হবে না, শুধুমাত্র $৬ কাটবে। আবার আপনার অ্যাকাউন্ট কারেন্সি যদি
EUR হয়, তবে ইউরোপের কোন দেশ থেকে ATM উইথড্র করলে অতিরিক্ত ২.৯৫% FX Fee
আপনাকে দিতে হচ্ছে না, শুধুমাত্র ৪ ইউরো ফিক্সড ফিই প্রযোজ্য হবে।
বাংলাদেশে থাকায় আমাদের অতিরিক্ত ২.৯৫% FX Fee দিতে হচ্ছে। এছাড়া VIP
অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের জন্য কম ফি'র সুবিধা রয়েছে।
আপনি
অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করলেই ফ্রি নেট+ মাস্টারকার্ডের জন্য আবেদন করতে
পারবেন। আবেদন করার ১৪-২১ দিনের মধ্যে আপনার ঠিকানায় বিনামূল্যে তারা
কার্ডটি পাঠিয়ে দিবে। কার্ডটি পাওয়ার পর আপনাকে কার্ডটি
Activate
করতে হবে। অনলাইনে কিংবা অফলাইনে শপিং, রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া, POS
সব জায়গায় এই কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে। কোন কারণে যদি আপনি কার্ডটি হাতে
না পান, ভুল ঠিকানা বা পোস্টম্যান ডেলিভারি না করার কারণে, তবে $২০
রিপ্লেসমেন্ট ফি দিয়ে আপনি পুনরায় কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। তাই
কার্ড অর্ডার করার পর নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে খোজ রাখুন এবং যথাসম্ভব
বিস্তারিত ঠিকানা দিন (বাসা নম্বর, গলি নম্বর, কত নম্বর ফ্লোর, ডান না বাম
পাশের অ্যাপার্টমেন্ট ইত্যাদি)
ভার্চুয়াল মাস্টারকার্ডঃ
নেটেলারে
ভার্চুয়াল মাস্টারকার্ডের সুবিধা রয়েছে। এর মাধ্যমে ১ মাস মেয়াদী
ভার্চুয়াল মাস্টারকার্ড আপনি তৈরি করে অনলাইনে শপিংয়ের কাজে ব্যবহার করতে
পারবেন।
ব্যাংক উইথড্রঃ
নেটেলারের
মাধ্যমে ব্যাংকে উইথড্র করার সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকে উইথড্র করতে হলে
আপনাকে ঐ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে স্ক্যান করে
আপলোড করে দিতে হবে উইথড্র রিকোয়েস্ট করার পেইজে।
উইথড্র ফিঃ $১২.৫ (VIP অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের জন্য ফি প্রযোজ্য হবে না)
সর্বনিম্ন উইথড্র অ্যামাউন্টঃ $৩০
সর্বোচ্চ উইথড্র অ্যামাউন্টঃ $১০০,০০০ (প্রতি উইথড্র তে, ২৪ ঘণ্টায় ১ বার)
উইথড্র আসতে সময় লাগবেঃ ২-১০ দিন
বিস্তারিতঃ https://help.netelle...tail/a_id/2358/
VIP অ্যাকাউন্টঃ
নেটেলারে
রয়েছে মার্চেন্টদের সাথে অধিক ট্রানজাকশন করলে VIP অ্যাকাউন্টে আপগ্রেডের
সুবিধা। বছরে $১০০০০ ডলার মার্চেন্টদের সাথে ট্রানজাকশন করলে আপনি ব্রোঞ্জ
VIP তে আপগ্রেড হবেন। এছাড়া ব্রোঞ্জ ছাড়াও সিলভার, গোল্ড, প্লাটিনাম,
ডায়মন্ড VIP লেভেল রয়েছে। VIP হলে আপনি বিভিন্ন ফি ডিসকাউন্টসহ সরাসরি
লাইভ চ্যাট করার সুবিধা পাবেন তাদের সাথে।
রিওয়ার্ড পয়েন্টঃ
নেটেলারের
আরেকটি সুবিধা হল রিওয়ার্ড পয়েন্ট। আপনার অ্যাকাউন্টের ট্রানজাকশনের ওপর
ভিত্তি করে আপনি পাবেন রিওয়ার্ড পয়েন্ট। পরে এই পয়েন্ট ক্যাশ করে নিতে
পারবেন ডলারের সাথে। যদিও খুব বেশী যে পাওয়া যায় লাভ তা নয়। তবে কিছু না
পাওয়া থেকে মাঝে মাঝে কিছু পাওয়া খারাপ কি? আমার বর্তমানে ২৮০০০
রিওয়ার্ড পয়েন্ট রয়েছে। ৪২০০০ পয়েন্ট হলে $২৫ এর সাথে এক্সচেঞ্জ করে
নেয়া যাবে। খুব একটা খারাপ বলা যায় না।
সিকিউরিটিঃ
নেটেলারে
রয়েছে কয়েক ধাপ সিকিউরিটি সুবিধা। পাসওয়ার্ড ছাড়াও ভিন্ন কম্পিউটার
থেকে লগিন করার সময় আপনার কাছে সিকিউরিটি প্রশ্নের উত্তর চাইবে। অথবা
মাস্টারকার্ড নম্বর এবং expiry date প্রদান করেও সিকিউরিটি বাইপাস করতে
পারবেন। মাস্টারকার্ডের নম্বর কারো সাথে শেয়ার করবেন না, ছবি তুলে
ইন্টারনেটে আপলোড করবেন না, কোন বন্ধুকে দিবেন না। কারণ এই নাম্বার পেলে যে
কেউ আপনার অ্যাকাউন্টের মানি দিয়ে অনলাইনে শপিং করতে পারবে। সুতরাং আপনার
কার্ড গোপনে নিরাপদে রাখুন। আপনার কার্ড বা অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে দ্রুত
নেটেলার সাপোর্টে যোগাযোগ করবেন। কয়েকবার ভুল সিকিউরিটি প্রশ্নের উত্তর
দিলে সাময়িকভাবে নেটেলার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিবে। এরকম বন্ধ করে দিলে
আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। তাদের Request a call সুবিধা রয়েছে। সেখান থেকে
Call request করলে তারা আপনাকে ফোন করে আপনার জন্ম সাল এবং সিকিউরিটি
প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে এবং পুনরায় আপনার অ্যাকাউন্ট সচল করে দিবে।
অ্যাকাউন্ট লকঃ
ইদানিং
মাঝে মাঝে মানিবুকারস অ্যাকাউন্ট লক বা চিরতরে ক্লোজ করে দিচ্ছে। নেটেলারে
অবশ্য এখনো এমনটি শোনা যায়নি। কিন্তু হ্যাঁ বিভিন্ন কারণে নেটেলার আপনার
অ্যাকাউন্ট সাময়িক ডিজেবল করে দিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে তাদের Request A
Call অপশন থেকে রিকোয়েস্ট করলে তারা কল করবে এবং কিছু প্রশ্ন করে আপনার
অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করে দিতে পারে। তাই অ্যাকাউন্ট ডিজেবল দেখলেই
আতঙ্কিত হবার কারণ নেই। কেউ আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করলেও
তারা সাময়িকভাবে আপনার অ্যাকাউন্ট ডিজেবল করে দিতে পারে।
ট্রানজাকশন ফিঃ
বর্তমানে
নেটেলারে কোন রকম ট্রানজাকশন ফি নেই। তারমানে আপনি যে কাউকে কোন ফি ছাড়াই
কারেন্সি পাঠাতে পারবেন। যদিও পূর্বে ১.৯৯% ফি ছিল কিন্তু প্রায় ১ বছর
ধরেই তা বন্ধ রয়েছে। আপনি ফরেক্স ব্রোকার থেকে উইথড্র পেলেও তাতে কোন ফি
প্রযোজ্য হবেনা। মুলত এই সুবিধার জন্যই নেটেলার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
কিভাবে উইথড্র করবো?
নেটেলার
মাস্টারকার্ড এবং ব্যাংক উইথড্র ২টি সুবিধাই প্রদান করে। কিন্তু অনেকেই
পছন্দ করেন সরাসরি অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দিতে। তাই আপনি চাইলে অন্য
কারো কাছে সেল করতে পারেন। বড় অ্যামাউন্ট হলে ব্যাংকের মাধ্যমে উইথড্র করে
নিয়ে আসতে পারেন, অথবা জরুরি প্রয়োজনে ইনস্ট্যান্ট ATM বুথ থেকেও টাকা
তুলে নিতে পারেন। নেটেলারে আপনি সবই করতে পারবেন আপনার চাহিদা অনুযায়ী।
নেটেলার কোথায় পাবো?
এটাই
বাংলাদেশীদের জন্য সবচেয়ে প্রধান সমস্যা। অন্যান্য ই-কারেন্সির মতই
নেটেলার আপনার অন্য কারো কাছ থেকে প্রথম দিকে সংগ্রহ করতে হবে। সেই
ক্ষেত্রে সবসময় চেষ্টা করতে হবে বিশ্বস্ত কারো কাছ থেকে কেনার জন্য এবং
যথাসম্ভব ফেস২ফেস কেনা-বেচা করার জন্য। অনেকেই স্ক্যাম করার জন্য স্বল্প
মূল্য (সাধারনের থেকে অনেক কমে) সেল করার জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করতে
পারে। তাদের কথাও প্রলোভিত না হয়ে যাচাই করে বিশ্বস্ত ট্রেডার/সেলারদের
কাছ থেকেই ই-কারেন্সি কিনুন। উল্লেখ্য, বিডিপিপসের বা ফেসবুকের অ্যাকটিভ
কাউকে দেখেই তাকে বিশ্বস্ত মনে করে বসবেন না। অনেকে স্ক্যামিং করার জন্যেও
বিশ্বস্ত হবার মুখোশ পরে। পূর্বে এরকম স্ক্যামিংয়ের ঘটনা অনেক ঘটেছে।
অনলাইনে যেকোনো লেনদেনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
নেটেলার
সম্পর্কে যেসব তথ্য পাওয়া গেল, তা এখানে দেয়া হল। আরও কিছু মিস হয়ে
গেলে পরে যোগ করা হবে। আশা করি সবার কাজে লাগবে। ধন্যবাদ।
Neteller
এর বাংলাদেশী ইউজারদের জন্য তথ্য নিয়ে ফেসবুকে একটি পেইজ ওপেন করা
হয়েছে। নেটেলার সম্পর্কিত বিভিন্ন নিউজ পাওয়া যাবে এই পেইজে। পেইজ লিঙ্কঃ
http://fb.com/netellerBD